রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন
ভাস্কর সরকার (রাবি):
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালে মহাকাশে স্পুটনিক স্যাটেলাইট পাঠায়৷ তখন অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাতে সক্ষম হয়নি৷ ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন এইদিক থেকে এগিয়ে যায় এবং মহাকাশে সোভিয়েত আধিপত্যের শঙ্কা সৃষ্টি হয়৷ পরের বছরই অবশ্য মার্কিন সেনাবাহিনী এক্সপ্লোরার-১ মহাকাশে পাঠাতে সক্ষম হয়৷ আর সেবছরের ২৯ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে নাসা সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়৷
১৯৫৮ সালের ২৯ জুলাই ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কমিটি ফর অ্যারোনটিক্স (নাকা) এর পরিবর্তে একটি নতুন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা গঠন করা হয়। যার নাম রাখা হয় “ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন” (National Aeronautics and Space Administration) সংক্ষেপে নাসা। নবগঠিত সংস্থাটির জন্য একটি ভিন্ন ধরনের তত্ত্বাবধায়ন আশা করা হচ্ছিল, যা মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণা ও প্রয়োগে উৎসাহিত করার মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ মহাকাশ অনুসন্ধানের নেতৃত্বে নাসা ভূমিকা পালন করে, যার মধ্যে অ্যাপোলো মুন ল্যান্ডিং মিশন, স্কাইল্যাব স্পেস স্টেশন এবং স্পেস শাটল মিশন ছিল। নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের উন্নয়নে সহযোগিতা করছে এবং ওরিয়ন স্পেসক্রাফট, স্পেস লঞ্চ সিস্টেমের বিকাশে তদারকি করছে। এজেন্সি লঞ্চ সার্ভিস প্রোগ্রামের জন্যও নাসা কাজ করে যাচ্ছে। নাসা আর্থ অবসার্ভিং সিস্টেমের মাধ্যমে পৃথিবীকে আরও ভালোভাবে বুঝার দিকে মনোনিবেশ করেছে। নাসার গবেষণা ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে, সাইন্স মিশন ডিরেক্টরেটের হেলিওফিজিক্স গবেষণা কার্যক্রমের প্রচেষ্টার মাধ্যমে হেলিওফিজিক্সের অগ্রগতি করা; নিউ হরাইজনসের মতো উন্নত রোবোটিক মহাকাশযানের মাধ্যমে সৌরজগৎ জুড়ে প্রাণীদেহ অনুসন্ধান করা; বিগ-ব্যাংয়ের মতো জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়গুলি নিয়ে গবেষণা করা।
নাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুদীর্ঘ ৬৩ বছরে মহাকাশ গবেষণায় একের পর এক নানা সাফল্য অর্জন করেছে এই সংস্থাটি৷ গ্রহ, উপগ্রহ এমনকি ধূমকেতু অভিমুখে মহাকাশ যান পাঠানোর কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু নাসা পাঠিয়েছে হিলিয়ামে ভরপুর সূর্যের দিকে, যার নাম পার্কার। উদ্দেশ্য সূর্যকে স্পর্শ করা৷ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা- নাসার এই যানটিই মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে প্রথম কোন স্পেইসক্রাফ্ট যা সূর্যের পরিমণ্ডলের গভীরে প্রবেশ করবে। এটি সূর্যের চারদিকে ঘুরতে শুরু করবে ২০২৪ সাল থেকে। এছাড়া মঙ্গলগ্রহের আকাশে ইনজেনুয়িটি নামের ড্রোন সফলভাবে উড়িয়ে নাসা অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছে৷ আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে তারা প্রথমবারের মত মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠ থেকে সফলভাবে একটি ছোট ড্রোন ওড়াতে সক্ষম হয়েছে। ইনজেনুয়িটি নামের এই ড্রোন মঙ্গলের আকাশে এক মিনিটের কম সময়ে ওড়ে।
সৌরজগতের লোহিত গ্রহ মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের ৯৫ শতাংশই কার্বন ডাই-অক্সাইড। তারওপর এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব অনেক কম। সব মিলিয়ে রুক্ষ-শীতল গ্রহটি মানুষের বসবাসের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়। তবে সেই বৈরী পরিবেশকে অনুকূল করার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে কিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করে তা শ্বাসযোগ্য বিশুদ্ধ অক্সিজেনে পরিণত করা হয়েছে৷ নাসা প্রেরিত ছয় চাকার মঙ্গলযান পারসেভারেন্সে একটি যন্ত্রাংশের পরীক্ষার সময় এই সাফল্য অর্জন করে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। এ সময় সৌরজগতের লোহিত গ্রহ মঙ্গলের কম ঘনত্বের বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে তা সফলভাবে অক্সিজেনে রূপান্তরিত করেছে ওই যন্ত্রাংশ।
কিন্তু কোভিড-১৯ বৈশ্বয়িক মহামারীর প্রভাবও পড়েছে এই সংস্থাটির উপর৷ নাসা পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না হওয়া পর্যন্ত তার সমস্ত ফিল্ড সেন্টার ভিজিটর কমপ্লেক্স অস্থায়ীভাবে বন্ধ করার ঘোষণা করে দেয়, পাশাপাশি সম্ভবপর সকল নন-ক্রিটিকাল (দুর্যোগ মোকাবেলায় সরাসরি সম্পৃক্ত নয় এমন) কর্মীদেরকে বাড়ি থেকে কাজ করার পরামর্শ দেয়। মিচাউড অ্যাসেমব্লিলি ফ্যাসিলিটিতে স্পেস লঞ্চ সিস্টেম এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, এবং জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এর নির্মাণ কাজ সম্পন্নকরণেও আরও বিলম্ব আশা করা হচ্ছিল, যদিও ২০ শে জুন ২০২০ সীমিত পরিসরে কাজ আবার শুরু হয়েছে।
জনসন স্পেস সেন্টারের বেশিরভাগ কর্মীদেরকে টেলিওয়ার্কিং করার এবং আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন মিশনের ক্রিটিকাল (দুর্যোগ মোকাবেলায় সরাসরি সম্পৃক্ত) কর্মীদেরকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মিশন কন্ট্রোল রুমে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্টেশন অপারেশনগুলি তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবে নতুন অভিযাত্রী নভোচারীদের ফ্লাইটের আগে দীর্ঘতর ও কঠোর কোয়ারেন্টাইন পালন করতে হয়েছিল।
বর্তমানে সাবেক মার্কিন সিনেটর ও নভোচারী ৭৮ বছর বয়সী বিল নেলসনকে নাসার নতুন প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পরিশেষে বলতে হয়, রহস্যেঘেরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নানা বিষয় উন্মোচিত হোক পৃথিবীর মানুষের সম্মুখে৷ জয় হোক বিজ্ঞানের, জয় হোক নাসার৷
লেখক
গবেষক ও প্রাবন্ধিক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়৷
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।